|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শাহরাস্তির পরাণপুর ফাজিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৭ মার্চ, ২০২০
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার পরাণপুর ফাজিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মানে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে এমপি মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম) টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির কাজের শুভ উদ্ভোধন করলেও ২০২০ সালের জানুয়ারীতে ভবনটির কাজ পুরোপুরি শুরু করা হয়। নির্মানের শুরু থেকে কাজে দূর্ণীতির অভিযোগে বার বার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হলেও এ ব্যাপারে উদাসীন দেখান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও স্থানীয় এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরাণপুর ফাজিল মাদ্রাসাটি শাহরাস্তির পুরাতন মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০ জন। বর্তমানে ঝুকিপূর্ণ একটি ভবনে তারা পাঠদান করছে। জরাজীর্ণ ভবনটি যেকোনো সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনায় প্রাণনাশের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মত দেন শিক্ষকরা।
সূত্রটি আরো জানায়, মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহরাস্তির ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাওন ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ কার্যাদেশ পান। কাজ শুরুর ১৮ মাসের মধ্যে ওই কাজ শেষ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের চাবি হস্তান্তর করার কথা। ভবনের জন্য ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকার বিজ্ঞপ্তি হলেও পাঁচ শাতংশ রাজস্ব বাদ দিয়ে ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৬১.৮৭ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়। কাজটি সিভিল ওয়ার্ক, ইলেক্ট্রিকাল ওয়ার্কস এবং স্যানিটারি ও পানি সরবরাহ তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। পরাণপুর ফাজিল মাদ্রসার নির্মাণ কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকেন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জসিম।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে পরাণপুর ফাজিল মাদ্রাসায় গেলে দেখা গেছে নিম্ন মানের ইট দিয়ে ভবনের গাথুনির কাজ শুরু করা হয়েছে। এসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাইট কন্ট্রাকটর হোসাইনকে পাওয়া যায়। তাকে নিম্নমানের ইটের
ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ইটগুলো অন্য কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছিলো। মিস্ত্রিরা না বুঝেই এসব ইটগুলো ভালো ইটের সাথে মিক্স করে ফেলে কাজ শুরু করে। এমন ভুল কেন হলো প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, শিডিউল বহির্ভুতভাবে নিম্মমানের উপাদান দিয়ে কাজ করায় শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের প্রতিনিয়ত বচসা হয়েছে। বিষয়টি প্রকৌশলী জসিমকে জানালে তিনি কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন।
এলাকাবাসী মো মিরাজ বলেন, কাজের শুরুতেই অনিয়ম নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়েছে কয়েকবার। এতে নির্মাণ শ্রমিকরা চলে গেছে কয়েকবার। এরপরও সিডিউল সম্পর্কে তাকে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। তবে কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করা হলে সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবার কাজ শুরু হলে তারা ইটের গাথুনির সময় নিম্নমানের ইটা ব্যবহার করে। এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মিলে আজও কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আর ভুল হবে না মর্মে পুণরায় কাজ শুরু করেন।
মাদ্রাসার সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ঠিকাদার শাওনের সাথে গত মাসেও এক গাড়ি নিম্নমানের ইটের খোয়া নিয়ে আমার তর্ক হয়েছে। সেদিন সেই গাড়ির খোয়া আমি আর ব্যবহার করতে দেই নি৷ আজকের বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি, কিন্তু সরেজমিনে আমি গিয়ে দেখার সুযোগ পাই নি সময়ের অভাবে। কিন্তু মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিষয়টি আমাকে জানান নি। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৭২ বছর পর মাদ্রাসাটি এমপি মহোদয়ের কল্যাণে একটি ভবন পেলো। অথচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির গাফিলতিতে আজ সেই ভবনটি কাজ শুরুর পর্যায়েই এতো দূর্ণীতির চাদরে আবৃত। কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত কি হয়, তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। তিনি এমপি মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তার সুষ্ঠু তদারকিতেই কাজটি পূর্ণতা পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। আর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.