|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
হিংসা বিদ্বেষ মানুষকেই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
নজরুল ইসলাম তোফা,
হিংরসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধর্ম সহ পবিত্র কোরআনে শক্ত অবস্থান আছে। কোরআনের মধ্যেই সূরা ফালাকে ঘোষণাও আসে তাহলো,- ‘'আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।" হযরত আলী (রাঃ)ও বলেছেন যে,- 'সুস্থ থাকার জন্য হলেও হিংসা পরিত্যাগ করো, কেননা হিংসা মানুষকে ভিতর হতে গলিয়ে দেয়"। নষ্ট করে দেয় আত্মাকে। দিনে দিনেই যেন মানুষ অসুস্থ ও অশুদ্ধ ব্যক্তির কাতারে পড়ে। অন্যদিকে যাকে হিংসা করে তার সাময়িক ক্ষতি হলেও সেখানে অহেতুক সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। "লোকে হিংসা করছে মানেই, আপনি উন্নতি করছেন।
কিন্তু যেমুহুর্তে হিংসাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করবেন, অবনতির রাস্তা খুলে যাবে। কে কি ভাবছে- তা নিয়ে মাথা ঘামালে নিজের কাজটা করবেন কখন। আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) তাঁর সু- চিন্তিত মতামতের আলোকে বলেন, 'যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে পারবে, সে কখনো সফলতা থেকে বঞ্চিত হবে না। তাই সফল হবার জন্য তার একটু বেশি সময় লাগতে পারে।' সুতরাং অপছন্দ ও অন্ধকার মনে হওয়া ব্যক্তিদের এবং আলোকিত ব্যক্তিদের কখনোই গাল-মন্দ করা যাবে না। নিজ থেকে ছোট্ট একটি বাতি জ্বালানোই উত্তম। কেননা দেখাও যায় যে নিজ কর্মে প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং পরিশ্রমী না হয়ে নিন্দুক ব্যক্তিরাই যেন- অন্যের কর্মের প্রতি হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা বা সম্পদ পাওয়ার মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা অথবা হিংসা-বিদ্বেষের মতো অনেক নেতিবাচক কর্মকান্ড করে থাকে। হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎ কর্ম ও পুণ্যকে তার একান্ত অজান্তেই কুরে কুরে খায়। এই মানুষকেই হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি ও হানাহানি ইত্যাদি সামাজিক অনাচারের পথকে পরিহার করেই পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেই যেন আবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ইসলাম সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের প্রতিই মানুষের পরিশীলিত জীবনবোধ সৃষ্টি করে নিজকে গড়ে তোলা উচিত। এসব বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষদেরই মুল কথা, উক্তি বা বাণী। হিংসা সমাজ জীবন এবং কর্ম জীবনেই অনেক অশান্তি বয়ে আনে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। সৃজনশীল কর্ম কান্ডকে ব্যহত করে। 'আমল ও ঈমান' ধ্বংস করেই কুফরের দিকে নিয়ে যায়। হিংসা কারো জীবন ও মনের মাঝে প্রবেশ করানো উচিত নয়। মানব চরিত্রে যে গুলো খারাপ দিক আছে, তার মধ্যেই হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা কিংবা কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকেই যেন অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে করেই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি- মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট এবং ধ্বংস করে।
পরিশেষে বলা যায়, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক বার্তা দিয়েই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের পরিবর্তে সামাজিক শান্তি, সম্প্রীতিকে বজায় রাখার উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৪) ‘'আল্লাহ পাক নিজ অনুগ্রহে মানুষদেরকে যা দিয়েছেন, সেই জন্যেই কি তারা ঈর্ষা করে?’ ইসলাম আসলেই অন্যের প্রতি হিংসা করা ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং সিংসা তারাই করতে পাবে, যাদের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার কোনো যোগ্যতা নেই। আর কখন যে কোন মানুষকে কার দরজায় দাঁড় করাবে তা কোনো মানুষও টের পারেনা, শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের অমানুষিক খারাপ আচরন কিংবা হিংসা করা উচিৎ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিংসাকে নিয়ে বলেন, তোমরা পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অপরের সাথে কোনো সম্পর্কচ্ছেদও করোনা, একজন আরেক জনকেও কখনো ঘৃণা করো না। বরং- আল্লাহ তাআলার বান্দা হিসেবেই- পরস্পরের ভাই হও। হিংসার পরিণতি হলো দুঃখ এবং হতাশা। কেননা সকল মানুষের উল্লেখ যোগ্য অর্জন বা নিয়ামত প্রাপ্তিটাই যেন হিংসুক ব্যক্তির অন্তরে ঈর্ষা, হতাশা ও কষ্টের জন্ম দেয়। এতে এক সময় সেই মানুষরাই কঠিন মর্মপীড়ায় ভুগতে থাকে। তাদের দেখা দেয় নানাধরনের শারীরিক সমস্যা। আবার যখন কোনো মানুষ, অন্য মানুষের প্রতি ঈর্ষাতুর হয়, তখন সে আল্লাহ তায়ালা'র প্রজ্ঞাকেই সন্দেহ করে। আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশ এবং সিদ্বান্ত'কে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সৃষ্টিকর্তা কাকে কোন নিয়ামত দিবেন কিংবা কার প্রতি কতটুকু দয়া দেখাবেন, তা একান্তই তাঁর নিজ ইচ্ছাধীন। তারপরও হিংসুক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মানুষরা চায় ঈর্ষাকৃত ব্যক্তি কর্তৃক উপভোগকৃত নিয়ামতটি যেন হারিয়ে যায়। তারা চায় নিজে তা উপভোগ করতে। তারা পারুক আর নাইবা পারুক, ঐসব অর্জন ও নিয়ামতকে ভোগ করার উপযুক্ত হোক বা না হোক। তাই বিখ্যাত মনীষীদের সত্য বাণী এবং উক্তির আলোকে জীবনযাপন করলে হয়তো হিংসাকে দূূূর করে খুব সুন্দর জীবন গড়ে তোলা সম্ভব।হিংসা থেকে বাঁচার জন্যেই যেন উত্তম আচরণ ও পবিত্র অন্তরের অধিকারী হতে হবে। অন্যমানুষদের যে কোনো কিছু অর্জন কিংবা উপভোগ করেছে, সে নিয়ামতটাকে নিজের জন্যেই প্রত্যাশা করার অনুমতি আছে। তবে এই শর্তে যে, উপভোগকারী কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে তা কেড়ে নেওয়া হোক এমনটা প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। সৃষ্টি কর্তার দেওয়া নিয়ামত বা সুফল অন্যকেউ শ্রম দিয়ে তা নিজের করে ভোগ করুক, তাও অন্যকে অপছন্দ এবং হিংসা করে নয়। মানুষের উচিত, সৃষ্টি কর্তা অন্যকেই কী দিয়েছে, সেটা নিয়ে কু-চিন্তা ও হিংসা না করে তাকে যে সব গুণাবলি কিংবা নেয়ামত দিয়েছে, সেইগুলোর কথা চিন্তা করা এবং প্রয়োজনে তা গণনা করেই নিজ জীবন কর্মে প্রতিফলন ঘটানো। অহেতুক আত্ত্বদম্ভ, পরচর্চা বা হিংসা করে নয়। আমিত্ত্ব বা নিজস্বতাকে প্রতিষ্ঠিত করে চেতনাকে জাগ্রত উচিত। জাতীয় কবি- "কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ওরা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেস আর নিন্দাবাদ, আমরা বলব সাম্য শান্তি আর এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
লেখক:-
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.