|| ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
সোনাগাজীতে মাটি দস্যুদের তাণ্ডবে গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
গাজী মোহাম্মদ হানিফ, সোনাগাজী (ফেনী) থেকে:-
মাটি ব্যবস্থাপনা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা ফসলী জমির উপরাংশের মাটি বিক্রি করায় জনমনে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। মাটি দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। প্রকাশ্যে গোপনে প্রশাসনকে জানিয়েও তেমন কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা জনগণ। ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে পাওয়ার ট্রলি দিয়ে পরিবহনের ফলে অনেক সড়ক ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত এমন সড়কও অব্যাহত মাটি পরিবহনের কারণে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুর আশপাশের সড়ক, মুন্সি বাড়ী সড়ক, চরদরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখিল, চর মজলিশপুর, চরছান্দিয়া মঙ্গলকান্দি মতিগঞ্জ আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক, মাটির রাস্তা দেবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে, পিচঢালা রাস্তাগুলো অত্যাধিক চাপে ভেঙে পড়েছে। মেকাডম ভেঙে ইটের লালছে বালি ছড়িয়ে পড়েছে, ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও সর্ব সাধারণের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। একটি যানবাহন চললে সেই যানবাহনটির ধূলো-বালিতে পথ একাকার হয়ে যায়, পিছনে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে চরম অসুবিধা হয়। বগাদানার অধিবাসী অাবুল খায়ের নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অবৈধভাবে ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে ইটভাটায় পরিবহনের ফলে এলাকার বেশীর ভাগ সড়ক আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
বগাদানা ইউনিয়নের এক ইউপি জানান- অত্যাধিক মাটি পরিবহনের কারণে গ্রামীন সড়কগুলো বিনষ্ট হচ্ছে, ধুলোবালির কারণে মানুষের বসত বাড়িতে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশে বাড়িতে বসবাসকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বগাদানায় মাটি বিক্রির সিন্ডিকেটের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান ইছহাক খোকনের ভাই রোকন, স্থানীয় যুবলীগকর্মী দাউদ, শাকিল সহ কয়েকজন জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মুন্না, সাইফুল, আবদুল সর্দার, মীর আহমেদ, বেলাল সর্দার, মিষ্টার, রুমন, আলমগীর, ইমাম সহ যুবলীগ নেতাকর্মী জড়িত বলে জানা গেছে। পরোক্ষভাবে কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি অনেকেই নিজেদের সম্পৃত্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি ও পরিবহনের সাথে সরকারি দলের প্রভাবশালী লোকজন জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াতুল হক বিটু, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন (ছোট জামাল) আলাউদ্দিন বাবুল মেম্বার, সেলিম মেম্বার সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন ও দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা মাটি সিন্ডিকেটের তাণ্ডবের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন জানান, তিনি মাটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত নয়, দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় তিনি বাঁধা দিয়ে বিরাগভাজন হতে চাননা। মঙ্গলকান্দি ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আলমগীর মাটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এমন অভিযোগ থাকলেও তিনি অস্বীকার করেন। উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন- আমি মাটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। চরদরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু জানান, দলীয় নেতাকর্মীরা চুরি ডাকাতি মাদক ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত নাহয়ে মাটি বিক্রির ব্যবসা করছে এতে সমস্যা কোথায়? রাস্তাঘাট যেগুলো নষ্ট হয়েছে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উপজেলা যুবলীগ সহসভাপতি ওমর ফারুক রুবেল জানান, গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষায় দ্রুত মাটি সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা উচিত।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.