|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ছাগলনাইয়া ইট ভাটায় চলছে অমানবিক ‘শিশুশ্রম’
প্রকাশের তারিখঃ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
সেপাল নাথ, ছাগলনাইয়া (ফেনী) প্রতিনিধি: সূর্যের আলো পুরোপুরি উঠার আগেই ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী সাকিব, সোহাগ, রিয়াজ, ঝুমুর, ইমন, শিপন, রাশেদ সহ ও আরও অনেক শিশু শ্রমিক ইট টানার কাজ শুরু করে দিন শেষে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার ইট বহন করে প্রতিদিনই। বিনিময়ে টাকা পায় বলে জানান।
টাকা দিয়ে কি করবে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে রিয়াজ জানিনা বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবুঝ শিশু গুলি পারিবারিক অভাব-অনটনের শিকার হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছে।
ঝুমুর (৯) ও ইমন (৮) তারা দুইজনেই ভাই বোন কেবলই শুরু করেছিল স্কুলে যাওয়া কিন্তু বেশি দিন নয় অজ্ঞাত কারণে বাবার সাথে সেও ইট ভাটার শ্রমিকের কাজ করছে ছাগলনাইয়া রাধানগর ইউপিস্থ পূর্ব মধুগ্রাম (বিডিআর ক্যাম্প'র দক্ষিন পার্শ্বে) মর্ডাণ ব্রিক ফিল্ড এ।
সাকিব (১১), সোহাগ (১২) নয় এমন আরও অনেক শিশুরা কাজ করছে ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে পূর্ব মধুগ্রাম এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এমবিএস ব্রিকস্ কোম্পানি নামের একটি ইট ভাটায়।শিপন (১৩), রাশেদ (১১) প্রতিদিন সকাল ৭ টায় থেকে রাত পর্যন্ত ইট টানার মত ভারি কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন’ ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা। ওই আইনে বলা হয়েছে কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে।
কিন্তু ইট ভাটার মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ কে বৃদ্ধা আঙ্গুঁলি প্রদর্শন করে শিশুশ্রম করিয়ে যাচ্ছে। কতটা পালন করেছে তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বছরের কম বয়সী এমন অনেক শিশুরা কাজ করছে দিব্বিতে। রোজ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ইট তৈরি ও ইট টানার মত কঠিন কাজ করানো হয় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে। যে হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা তার পরিবর্তে অল্প বয়সী সাকিব, সোহাগ, ঝুমুর, ইমন, শিপন, রাশেদ'র মত শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইট তৈরির মতো কঠিন কাজ। শুধু ছেলে শ্রমিক নয় রয়েছে কিছু মেয়ে শ্রমিকও যাদের বয়স ১২ এর নিচে।
জানা যায় ইট পরিবহণের মতো এমন ভারী কাজ করতে গিয়ে অনেক শিশুকেই নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্নক আহত হতে হয়। আহত বা অসুস্থ হলে তাদের নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা, খোঁজ নেয়না ভাটা মালিক পক্ষ। যদিও এমবিএস ব্রিকস্ মালিক (মোঃ জিন্নাহ), মর্ডান ব্রিকস্ মালিক (মোজাম্মেল হক) ও কামাল এন্ড সন্স'র মালিক (কুয়েতি কামাল হোসেন) এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ইট ভাটায় কোন শিশু শ্রমিক নেই।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ও পরিবেশ ফাউন্ডেশন ছাগলনাইয়া পৌর শাখার সভাপতি মোঃ সাখাওয়াত হোসেন পাটোয়ারীকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন শিশুশ্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা শিশুশ্রমের সাথে সম্পৃক্ত আছে তারা যেই হক না কেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ও পরিবেশ ফাউন্ডেশন ছাগলনাইয়া পৌর শাখার পক্ষ থেকে এটাই আমাদের দাবী।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া তাহের বলেন, যদি কোন ইট ভাটায় এমন শিশুশ্রম দেখা যায় তবে সেই ভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.