|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
হাজীগঞ্জে শিক্ষকরা নিচ্ছেন ঘুষ, অভিভাবকরা কিনছেন নিষিদ্ধ গাইড বই- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
খালেকুজ্জামান শামীম :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৩৬ টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১৩টি মাদ্রাসায় পাঠ্য হয়েছে নিষিদ্ধ গাইড বই। দেশের বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনী থেকে ঘুষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড বই ক্রয় করার নির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষকরা। পৃথকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের সাথে ঘুষ বিনিময় করার অভিযোগ ওঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন লাইব্রেরীর গাইড বিক্রেতারা দৈনিক বাংলার অধিকার বলছেন, গাইড বই প্রকাশনীগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের সাথে সমন্বয় করেছে। আমরা সব প্রকাশনীর গাইড বই বিক্রি করছি। একেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেক প্রকাশনীর বই পৃথকভাবে পাঠ্য করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর হাজীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে গাইড বই পাঠ্য করাতে পারেননি প্রকাশনীগুলো। তাই নতুন কৌশলে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কমিটির সভাপতিদের ম্যানেজ করে তাদের কোম্পানীর বই পাঠ্য করেছে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আমিন মেমোরিয়াল, বেলচোঁ, সুহিলপুর, ধড্ডা পপুলার, পিরোজপুর, মৈশাইদ পল্লীমঙ্গল, পালিশারা, রাজারগাঁও, হাটিলা টংঙ্গীরপাড়, রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমিতে লেকচার পাবলিকেশন্স’র গাইড ও ব্যাকরণ বই নির্ধারণ করা হয়েছে।
এভাবে নাসিরকোট, বাকিলা, জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। মালিগাঁও, রান্ধুনীমূড়া, বোরখাল ও অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় পুঁথিনিলয় প্রকাশনী। বলাখাল ও বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয় ক্লাসফ্রেন্ড পাবলিকেশন্স।
দেশগাঁও, প্যারাপুর, আনোয়ার আলী মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, বেলঘর স্কুলে গ্যালাক্সি পাবলিকেশন। বলাখাল জেএন স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রীপুর, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাপটেন। মেনাপুর পীর বাদশা মিয়া ও মেনাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ফাহাদ বুক। সপ্তগ্রাম ও বড়কুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুপম পাবলিকেশনের গাইড ও ব্যাকরণ বই নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৩ টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপাররা আল ফাতাহ প্রকাশনীর সাথে সমন্বয় করে গাইড বই নির্ধারণ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে পালিশারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেকচার কিনছে। আমরা শুধু পরামর্শ দিয়েছি। তবে ঘুষ বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। আমি এখনো নেইনি।’
গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে মির্জা লাইব্রেরীর মালিক মির্জা গিয়াস উদ্দিন ও কিশোর লাইব্রেরীর মালিক জাবের আহম্মেদ সুমন দৈনিক বাংলার অধিকার প্রতিনিধিকে বলেন, উচ্চ আদালতে পুস্তক প্রকাশনীর একটি রীট মামলা চলমান রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে গাইড বই বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না।
হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক বাংলার অধিকার কে বলেন, নোট বা গাইডবই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারী বইয়ের বাহিরে কোন বই শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করাতে পারবে না।
এ জন্য আমরা সরকারী প্রজ্ঞাপন সকল প্রতিষ্ঠানে দিয়েছি এবং আমরা নিজেরাও মনিটরিং করছি। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বই লাইব্রেরীগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবো।
জানতে চাইলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জাকারিয়া বলেন, সরকার গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে। এসব বিষয়ে প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.