|| ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
পঞ্চগড়ে ইত্যাদি ব্যর্থ প্রশাসন-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২০
দেশের সর্বউত্তরের শান্তি প্রিয় জেলা পঞ্চগড়। গত ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে দুকথা লিখছি।
নন্দিত উপস্থাপক হানিফ সংকেত এর শিক্ষনীয় এবং বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "ইত্যাদি"-এর সুনাম শুধু দেশ জুড়েই নয় বিদেশের গন্ডিতেও। বর্তমান সময়ে অনেক দর্শকের কাছ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) শুধু ইত্যাদির জন্যই পরিচিত। কারণ, ইত্যাদি কেবল বিটিভিতেই প্রচার হয়। ইত্যাদি ব্যাতিত এই দর্শকরা ভুলেও বিটিভি দেখেনা। এছাড়াও হানিফ সংকেত-এর প্রতি এই দর্শকদের আগ্রহেরও কমতি নেই। ব্যতিক্রম ছিলোনা পঞ্চগড়বাসীও। সরাসরি উপভোগ করবে ইত্যাদির অংশ বিশেষ, দেখবে হানিফ সংকেতকে এ যেন পঞ্চগড়বাসীর বিরাট সৌভাগ্য। তাইতো যে দিন থেকে প্রচার হয়েছে এবার ইত্যাদি ধারণ হবে তেঁতুলিয়ায়, ঠিক সেদিন থেকেই এই শান্তি প্রিয় মানুষদের আগ্রহের শেষ নেই। কিভাবে যাবো, টিকিট মূল্য কত, ফ্রি হইলে আমন্ত্রণ পত্র কই পাবো? এমন নানা প্রশ্ন ছিলো মুখে মুখে। এক পর্যায়ে জানা গেলো প্রশাসন থেকে পাঁচ হাজার জনকে আমন্ত্রণ পত্র দেয়া হবে, যারা চেয়ারে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবে। এর বাইরে যারা আগ্রহি তারা পিছন থেকে দাড়িয়ে দেখবে।
যদিও উৎসুক দর্শকের তুলনায় আমন্ত্রণ পত্রের সংখ্যা খুবই সামান্য তারপরও বলতে হচ্ছে হানিফ সংকেত-এর ইত্যাদি অনুষ্ঠানতো পঞ্চগড়েই প্রথম নয়। কোথাও এমন বিশৃংখলা হয়েছে বলে মনে হয়না। হানিফ সংকেত-এর হয়তো একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো দর্শকদের নিয়ে। তার টিম হয়তো বলবে পঞ্চগড়ের মানুষ ভালোনা, বিশৃংখলাকারী।
তবে আমি বলছিনা যে পঞ্চগড়ের প্রতিটা মানুষেই শান্তি প্রিয়, কিছু সংখ্যক হয়তো ছিলো নোংড়া উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার ছিলো? অবশ্যই প্রশাসনের কিন্তু কি করলো তারা?
ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে থেকে তথা গত ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি এই দুইদিন আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসনের দ্বারেদ্বারে ঘুরতে দেখেছি অনেক আগ্রহি দর্শককে। আমি এবং আমরাও ছিলাম সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রণপত্রের অপেক্ষায়। আবেদনও করেছি জেলা প্রশাসক বরাবর। প্রথম দিন জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানালো আমন্ত্রণপত্রের বিষয়ে কোন নির্দেশনা এখনো তারা পায়নি। দ্বিতীয় দিন জেলা প্রশাসক মহোদয় জরুরী বৈঠকে, মুঠোফোনে নক করলে খুব ব্যস্ত বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো। এডিসি জেনারেল দেখিয়ে দিলো এনডিসি মহোদয়কে, এনডিসি মহোদয় জানালো বিকেল ৩ টার দিকে আসেন, তারপর ৫ টা তারপর ৭টা সর্বশেষ রাত ৯টায় চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য সংখ্যক আমন্ত্রণপত্র পেলাম। অনেকেই প্রশাসনের কঠোরতায় আমন্ত্রণপত্র না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেলো। আমন্ত্রণপত্রে চোখ বুলিয়ে দেখি ১৪ বছরের কম বয়সী কোন শিশু অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেনা।
যাক পরদিন রওনা হলাম এবং পৌছে দর্শক হিসেবে চেয়ারে বসলাম। মুহুর্তেই দেখি মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ১৪ বছরের কম বয়সীদের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ বয়সের একটা বিরাট অংশ চোখে পড়লো। হয়তো সবার মত কৌতুহল বশত তারাও এসেছে কিন্তু প্রতিরোধের দায়িত্ব কার ছিলো? দেখলাম গতকাল অনেক ভদ্রলোককে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় রেখে আমন্ত্রণপত্র প্রশাসন দেয়নি অথচ আজকে অনেক বখাটের হাতে সেই মূল্যবান পত্রটা। এই ব্যর্থতা কার? এই বখাটেরাইতো অনেক মা-বোনের শ্লীলতাহানী করেছে এর দায়ভার কে নিবে? অনেক তরুনীকে দেখেছি আর্তনাদ করতে কিন্তু কেন? আবেগ প্রবণ হয়ে অনেক দর্শক বিদ্যালয় ভবনের ছাদে উঠেছে, টিনের উপর উঠেছে এবং টিনের চালা ভেঙ্গে পরে গিয়ে আহতও হয়েছে এই দায়ভার কার? কেন প্রথমেই বাধা দেয়া হলোনা? নিয়ন্ত্রনহীন অনেক দর্শক নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতি করেছে, ভাঙচুর হয়েছে চেয়ার। সুযোগ সন্ধানীরা শ্লীলতাহানী করেছে অনেক নারীর। এদিকে, অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে সড়কে ঝড়েছে তাজা প্রাণ।
মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখলো পঞ্চগড়ের প্রশাসনের ব্যর্থতা। সাংবাদিক হিসেবে ব্যর্থ প্রশাসনের সংস্কার চাই।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.