|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
আধুনিকতার ছোয়ায় কদরহীন কুপি বাতি ও হারিকেন-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯
নিয়ামুর রশিদ শিহাব, দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের কুপি বাতি ও হারিকেন। পল্লী বিদ্যুত ও সৌর বিদ্যুতের যুগে গ্রামীণ ঐতিহ্য কুপি বাতি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ঘরের অতি প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো আজ প্রায় বিলুপ্ত।
আগের কার দিনে গ্রাম কিংবা শহরের প্রতিটি ঘরেই ছিল কুপি বাতি ও হারিকেন। এই দুইটি পন্য ছিল না, এমন কোনো ঘর খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। কুপি বাতি ও হারিকেনগুলো ছিল বাহারি নকশার। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লোকজন কিনে সেগুলো ব্যবহার করতেন। মাত্র দুই দশক আগেও বেশিরভাগ ঘরেই ব্যবহার হতো হারিকেন। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সাঁঝের বেলায় নারীরা ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। প্রতি সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করত। তারপর ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগিয়ে রেশার মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে ঘরের মেঝে জ্বালিয়ে রাখত। ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা ও কিছুটা ছড়াকারের মত এক ধরনের কাপড় রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। হারিকেনের আলো কমানো ও বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি গিয়ার ছিল। হাতের সাহায্যে তা ঘুরিয়ে আলোর গতিবেগ কমানো ও বাড়ানো যেতো। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে সারারাত হারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো। এছাড়াও কুপি ছিল কয়েক প্রকার। মাটি, সিলভার, টিন, লোহা, কাঁচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপি। তবে সিলভার, টিন এবং মাটির তৈরি বাতির ব্যবহার ছিল খুব বেশি। একনলা, দুইনলা, একতাক, দুই তাকসহ নানা প্রকার। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো কিংবা পাটের সুতলি। চিকন আর ৫-৬ ইঞ্চির দৈর্ঘ্যের ওই রেশা, বাতির নল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতো। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুড়ে যেত। ফের পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দিতে হতো। এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানোর প্রয়োজন হতো। বাজার থেকে ২-৫ টাকায় ওই বাতির নলগুলো কিনতে পাওয়া যেত। যেহেতু কুপিও নেই,তাই নলগুলোর উৎপাদনও খুবই কম। কুপি বাতি বা হারিকেন দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতো। এছাড়াও রাতের সকল কাজ যেমনঃ রান্না-করা, কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, ধান মাড়ানো, যাতায়াতসহ সকল চাহিদা মেটানো হতো এই আলো দিয়ে। বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরও বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। সর্বত্র বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামীণ বাসিন্দাদের কাছে কুপি বাতি ও হারিকেনের কদর কমে গেছে। গ্রামীন কিছু বাসা-বাড়িতে এই পন্য দুইটি থাকলেও তা অযত্ন ও অবহেলায় এর স্থান হয়েছে ঘরের কোনায়। এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে প্রাচীনকালের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.