|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ড্যান্স বারে কাজ দেওয়ার নামে তরুণীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ বিভিন্ন শহরে পাচার- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৫ নভেম্বর, ২০১৯
ড্যান্স বারে কাজ দেওয়ার নামে তরুণীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ বিভিন্ন শহরে পাচার- দৈনিক বাংলার অধিকার
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, ফুজাইরা ও রাস আল খাইমায় অন্তত ৪০-৪৫টি বাঙালি ড্যান্স বার রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তরুণীদের মূলত এসব বাঙালি বারে কাজ করতে নেওয়া হয়।
ড্যান্স বারে কাজ দেওয়ার নামে তরুণীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ বিভিন্ন শহরে পাচারে সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। এদের প্রধান লক্ষ্য নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণীরা। তাঁদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সেখানে নিয়ে যৌন পেশায়ও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব চক্রের অনেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলায় নাচের স্কুল (ড্যান্স স্কুল) খুলে এই নারী পাচারে যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা একেকজন তরুণীকে বিদেশ যেতে রাজি করানো বাবদ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পান আরব আমিরাতে থাকা মূল চক্রের কাছ থেকে। তরুণীদের মূলত তিন মাসের পর্যটক ভিসায় পাঠানো হয়।
তরুণীদের সংগ্রহ, পাসপোর্ট করানো, ভিসা সংগ্রহ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার করানো এবং আরব আমিরাতে ‘ড্যান্স বারে’ পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সবখানে এই চক্রের লোক রয়েছে। বারে নৃত্য করার নাম করে নেওয়া হলেও এঁদের অনেককে যৌন পেশায় বাধ্য করানোর অভিযোগ রয়েছে। একশ্রেণির ট্রাভেল এজেন্সিও এই পাচার কাজে জড়িত রয়েছে। সরকারি একটি সংস্থার প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন অন্তত ৫০ জনের নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা এভাবে তরুণীদের পর্যটন ভিসায় দুবাই, আবুধাবি, শারজায় পাঠানোতে যুক্ত রয়েছেন।
আরব আমিরাতে এভাবে গিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন, এমন বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, পরিবারে আর্থিক অনটন রয়েছে, অল্প বয়সে বিয়ের পর তালাক হয়েছে এবং পোশাক কারখানায় কাজ করেন—এমন মেয়েরা সবচেয়ে বেশি এসব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডেরা দুবাই, বার দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, ফুজাইরা ও রাস আল খাইমায় অন্তত ৪০-৪৫টি বাঙালি ড্যান্স বার রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তরুণীদের মূলত এসব বাঙালি বারে কাজ করতে নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্লাবগুলোতে এসব তরুণীকে পাঠানো হয়। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে এ সংখ্যা বেশি। গত এক বছরে অন্তত তিন শ থেকে চার শ মেয়ে এভাবে তিন মাসের পর্যটক ভিসায় আরব আমিরাতের ড্যান্স বারে গিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একই তরুণী একাধিকবারও গেছেন, এমনও আছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে ২০১২ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পেশাজীবীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। পর্যটক ভিসা পাওয়াও সহজ নয়। কিন্তু ‘ড্যান্স বারে’ কাজ করে ফিরে আসা কয়েকজন তরুণী জানিয়েছেন, তাঁদের ভিসা পাওয়ার বিষয়ে তেমন প্রতিবন্ধকতা নেই। তিন মাস পর দেশে ফিরে এসে এঁরা কিছুদিন পর আবারও তিন মাসের পর্যটক ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে যাচ্ছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে চাকচিক্যময় জীবনে গিয়ে অনেকেই দেশে ফিরে খাপ খাওয়াতে পারেন না। তাই শুরুতে জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করালেও পরে অনেকেই দেশে ফিরে আবারও সেখানে যাচ্ছেন অর্থের কারণে।
এ বছরের ২৯ মে দুবাইভিত্তিক সংবাদপত্র ‘গালফ নিউজ’–এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, দুবাই পুলিশ চারজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বাঙালি তরুণীকে একটি নাইটক্লাব থেকে উদ্ধার করেছে। পাসপোর্টে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক দেখানো হয়েছিল। নাচের কথা বলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া এবং সেখানে নিয়ে যাওয়ার খরচ এক ব্যক্তি বহন করেন। এই চারজনের একজন জানিয়েছিল, তার পরিবার গরিব। তাদের জন্য উপার্জন করতে নাচের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর প্রতি মাসে অন্তত তিনজন সেবাগ্রহীতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে তাকে বাধ্য করা হয়।
নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা যাঁদের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে, তাঁদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। অনেকেই থাকেন বস্তিতে। সংগত কারণে পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জের একটি বস্তি থেকে যাওয়া ১৯ বছরের এক তরুণী এই কাজে যুক্ত হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সাত-আট বছর আগে তিন ভাইবোনকে রেখে তাঁর বাবা অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর তাঁদের মা পোশাক কারখানায় কাজ করে তাঁদের বড় করেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। তিনি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলছিল না। তখন বস্তির এক তরুণী তাঁকে দুবাই যাওয়ার বিষয়টি জানান।
সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া এই তরুণী জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরে অনিক সরকার নামে এক যুবকের মাধ্যমে তিনি প্রথম আরব আমিরাতের ‘ড্যান্স ক্লাবে’ যান। তিন মাস থেকে ফিরে আসেন। এরপর এই বছরের মাঝামাঝিতে আরেকবার গিয়েছিলেন। নাচের কথা বলে নেওয়া হলেও একপর্যায়ে যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।
ঢাকার একটি বস্তিতে বসবাসকারী ১৮ বছর বয়সী আরেক তরুণী জানান, প্রেম করে পছন্দের এক যুবককে তিনি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তাঁর পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতে শুরু করেন সেই ছেলে। একপর্যায়ে স্বামী বিদেশ চলে যান। তাঁকে চলার জন্য কোনো টাকা দেন না। নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কাজের সন্ধানে ছিলেন। তখন পাড়ার এক মেয়ে তাঁকে দুবাইয়ে কাজের কথা বলেন। পরিচয় করিয়ে দেন দুবাইয়ে থাকা মহিউদ্দিন নামে এক যুবকের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমে তিনি দুবাই যান। মাসিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় এক মাসে বারের মালিক তাঁকে বেতন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে তাঁকে যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।
এই তরুণী জানান, তিন মাস থেকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু সেখানকার জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় দেশে এসে তিনি খাপ খাওয়াতে পারছেন না। আশপাশের লোকজনও কানাঘুষা করছেন। তাই আবারও সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
যাওয়ার প্রক্রিয়া
‘ড্যান্স বারে’ কাজ করে দেশে ফিরে আসা কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরব আমিরাতে যাওয়ার বিষয়টি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে দেশে থাকা এজেন্টরা মেয়েদের ছবি ‘ড্যান্স বারের’ মালিকদের কাছে পাঠান। সেখান থেকে পছন্দ করলে ত
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.