|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ অক্টোবর, ২০১৯
বিশেষ প্রতিনিধিঃ চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ‘জমি আছে ঘর নেই, নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-০২ এর অধীনস্থ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মানা হয়নি যথাযথা নিয়ম। এ প্রকল্প নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানামুখী ক্ষোভ।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্যঃ
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং সকল গৃহহীন পরিবারসমূহকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষনিক নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়ণ” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন (০৩) টি ফেইজে আশ্রয়ণ প্রকল্প (৯১৯৭ - ২০০২), আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেইজ- ২) (২০০২ - ২০১০), আশ্রয়ণ- ২ প্রকল্প (২০১০ - ২০১৯) মোট ২,৯৮,২৪৯টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়, তন্মধ্যে আশ্রয়ণ- ২ প্রকল্পের মাধ্যমে ১,৯২,৩৩৬টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্ণিত প্রকল্পের সাফল্য ও ধারাবাহিকতায় ২০১০-২০১৯ (সংশোধিত) মেয়াদে ২.৫০ লক্ষ ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে এ অনিয়মের বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে প্রশাসণের চরম দায়িত্বের অবহেলা ও আর্থিক সুবিধা ভোগ ও স্বজনপ্রীতি ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতাধীন এ ঘর শুধুমাত্র অসহায় ও দুস্থ, যাদের জমি আছে, গৃহ নির্মাণের সামর্থ্য নেই তাদের পাওয়ার কথা। গত ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে শাহরাস্তি উপজেলায় ৪০২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণকারী ও উপকারভোগীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে অস্বচ্ছতা।
এছাড়া প্রকল্পের যে নির্দেশনা রয়েছে তাও দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিতরা হরিলুট করেছেন এ প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা। যারা ঘর পেয়েছেন তাদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ার পরেও কোন তদন্ত ছাড়াই ঘর বিতরণ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
একজন জন্মান্ধ মনোহর আলী ও আমাদের এমপির মহানুবভতা ঃ-
গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোহর আলী নামক গরীব ও অসহায় লোকের ঘটনা উঠে আসে। যিনি জম্মগত ভাবে অন্ধ ছিলেন এবং ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তির সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের শোরসাক গ্রামের একটি ঝুপড়ি ঘরে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতেন এই মনোহর আলী। স্থানীয় মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যান এই বিষয়টি না জানলেও স্থানীয় সাংবাদিকদের চোখের আড়াল হতে পারে নি বিষয়টি।
সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়লে চাঁদপুর ৫নং আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) প্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এর নজরে আসে। রফিকুল ইসলাম স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তারকে অন্ধ মনোহর আলীর বিষয়ে খোজ খবর নিতে বলেন। ইউএনও শিরিন আক্তার খোজখবর নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে তৎখনাত চাল ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ নগদ ৫ হাজার টাকা দেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খিষ্ট্রাব্দে স্থানীয় এমপি এলাকা আসলে সরাসরি তাহার বাড়িতে যান।
মেজর (অবঃ) প্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম অন্ধ মনোহর আলীকে আশ্বস্থ করে বলেন, আপনার জন্য তিন শতাংশ জায়গা কিনে একটি বাড়ি করে দেওয়া হবে। আপনার ২ মেয়ের বিবাহ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে এবং যে পর্যন্ত আপনার বাড়ি না হবে সেই পর্যন্ত আপনি বাসা ভাড়া থাকবেন, সেই থাকার ভাড়া আমি আপনাকে দিবো।
স্থানীয় এমপি এই মহানুভবতার নির্দশন স্থানীয় জনগনের নিকট আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
স্বচ্ছল পরিবার সরকারী ঘর পায় আর মনোহর আলী সেই ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত ঃ-
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির মোঃ শাহআলম, (৫৫) পিতা- মৃতঃ জুলফিকার নিজে স্বচ্ছল হয়েও নিজের স্ত্রী ও নিজের দুই মেয়ের নামে ৩টি সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পায়। একই পরিবারের ৩ জনের নামে কিভাবে ঘর বরাদ্দ হলো তাই নিয়ে স্থানীয় জনমনের প্রশ্ন। শাহ আলমের ১ম মেয়ে শাহীন বেগম (২৮), স্বামী- ইব্রাহীম, সাং- ভবানিপুর ও ২য় মেয়ে সারমিন আক্তার (২৫) স্বামী দ্বীন ইসলাম, সাং- পাথৈর এবং নিজ স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ঘর হত দরিদ্র না হয়েও কোন ক্ষমতাবলে তারা পেলো, তাই নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অথচ হত দরিদ্র জন্মান্ধ মনোহর আলী একই ইউনিয়নের হয়েও ঘর পায় না তা নিয়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় জনগণ।
শাহআলম ও তার স্ত্রীর ঘটনাক্রম (০১)
শোরশাক বাজার হতে ১ কিলোমিটার দূরেই হারের পাড় গ্রাম। সেই গ্রামের সরকারী হালট সংলগ্ন ১৫ শতক সম্পত্তির উপর বিশাল দৌচালা বাড়ির ঠিক পিছনেই সরকারী ভাবে নির্মিত ঘরটি তুলেছেন শাহ আলম। তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে ঘরটি বরাদ্দ হয়। প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনে বেড়িয়ে আসে আরও গোপন কিছু তথ্য। শাহ আলম নিজেকে ১৫ বছর ধরে গৃহে বন্দী প্যারালাইজ রোগী হিসেবে পরিচয় দিলেও, এলাকাবাসী বলেছে ভিন্ন কথা। তিনি পূর্বে কাঠের কাজ করতেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। আর এই ঘরের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান। তার স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, ঘরটি তিনি এমপি স্যারের বরাবর আবেদন করে বহু কষ্টে পেয়েছেন। তবে তিনি আবেদন পত্রটি দেখাতে না পারলেও নিজেকে অসহায় দাবি করে কাঁদতে থাকেন। তার আঙ্গিনায় ২ টি নলকূপ দেখে বিষয়টি নজরে আসলে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আর্সেনিকমুক্ত কলটিও এমপি মহোদয়ের নিকট আবেদন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দরখাস্ত জমা দিয়ে তা তিনি আনেন।
দুটি দরখাস্তে স্থানীয় প্রতিনিধিদের কোনো সুপারিশ ছিলো না বলেও তিনি জানান। তবে কি করে তিনি সরাসরি এমপি মহোদয়ের মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে ছলচাতুরী করে ন
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.