|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বন্যায় গাইবান্ধার ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন, ৫৩৯ টিতে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৯ জুলাই, ২০১৯
রাকিবুল ইসলাম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: চলমান এবারের ভয়াবহ বন্যায় গাইবান্ধার সাত উপজেলার ৫৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাঠদান বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০৯টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাঠদান বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা এবং ৪টি কলেজ রয়েছে। এছাড়া বন্যা ও ভাঙনের মুখে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আরও ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবারের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় পনেরো দিন পাঁচ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে পাঠদান থেকে বঞ্চিত গাইবান্ধার লাখেরও বেশি বানভাসি শিক্ষার্থী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত মেরামত করে বিশেষ ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণের পরামর্শ বিশিষ্টজনদের।
উজানের ঢলে ডুবে গেছে কোমলমতি শিশুদের পাঠশালা। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষ, বই-খাতা, খেলার মাঠ। সামনে পিএসসি পরীক্ষায় বসার তাড়া থাকলেও স্কুল বন্ধ থাকায় চিন্তিত ছাত্র ও অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হোসেন আলী জানান, বন্যার পানিতে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাঠ তলিয়েছে। কোনও কোনও বিদ্যালয়ের মাঠ ও ক্লাস রুমে কোমর পানি উঠেছে। কিছু বিদ্যালয়ের চারপাশে বন্যার পানি থৈথৈ করছে। আবার দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে সাত উপজেলায় চলমান বন্যায় ৩৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা হবে। তবে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য বন্ধের দিনসহ অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: এনায়েত হোসেন জানান, বন্যায় বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও অনেক প্রতিষ্ঠানে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কারণে জেলার ১৯১টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাদ্রাসা। এছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে পাঠদান শুরু হবে। পাঠদান বন্ধ ও বিদ্যালয় বিলীনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
গত ১১ জুলাই থেকে উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে গাইবান্ধায় একে একে সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ প্রায় ৪ শতাধিক গ্রামের বির্স্তীণ জনপদ প্লাবিত হয়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেড় লাখ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ছয় লাখ মানুষ। অধিকাংশ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে কোনও রকমে আশ্রয় নিয়েছেন উচু বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে। দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় চলমান বন্যায় ৫৯ হাজার ৮৭০টি পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন বীজতলা, পাট ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। মরে-ভেসে গেছে প্রায় ৬ হাজার ২৯০টি পুকুর-খামারের মাছ। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫৯৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ২৬৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ১৯ কিলোমিটার বাঁধ। ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট-বড় ৩১টি ব্রীজ-কালভার্ট। পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ব্যাপক ভাবে সরকারি বেসরকারি ভাবে ত্রান সহায়তা অব্যহত ভাবে চলছে। জেলার বন্যা কবলিত স্থান গুলোতে সকলেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সকলকেই ত্রান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাপক দূর্ভোগে জেলার বানভাসী মানুষেরা।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.