|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
টাঙ্গাইলে বন্যা কবলিত প্রায় চার লাখ মানুষ স্বাস্হ ঝুঁকিতে-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৩ জুলাই, ২০১৯
মো: আ: হামিদ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-
টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা কবলিত প্রায় সোয়া চার লাখ মানুষ স্বাস্থ ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারি দপ্তর থেকে বানভাসী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবার স্যালাইন রয়েছে বলা হলেও সরেজমিনে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে দায় এড়াচ্ছে সিভিল সার্জন অফিস। দুর্গম চরাঞ্চল ও পানিবন্দি মানুষের কাছে কোন ধরণের মেডিকেল সহায়তা বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও পৌঁছুচ্ছে না। টাঙ্গাইল জেলার কোথাও সাপে কাটা রোগির ভ্যাকসিন নেই।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুরের পল্লী চিকিৎস ডা. জহিরুল জানান, প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়া রোগির চিকিৎসা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যবলেট সরবরাহ করা হলে এই পরিস্থিতি হতো না। সবেমাত্র বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হুগড়া ইউনিয়নের চর হুগড়া গ্রামের হাফেজা বেগম জানান, তার টিউবওয়েলের অর্ধেক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। পানি ফুটিয়ে খাবেন সে ব্যবস্থাও নেই। কোথাও একটু শুকনো জায়গা নেই। পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি খুঁজে পাচ্ছেন না। কোথায় গেলে পাওয়া যাবে তাও জানেন না তিনি। ফলে ডুবন্ত টিউবওয়েলের পানিই পান করছেন।
হুগড়া ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্ঝল হোসেন খান তোফা বলেন, আমি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন ধরণের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পাইনি। আমার ইউনিয়ন অত্যন্ত দুর্গম চরাঞ্চল। এখানে এমনিতেই পানীয় জলের অভাব রয়েছে। এই বন্যায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। বন্যার্তরা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পেলে ভাল হত।
কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, তার ইউনিয়নের ২৯ হাজার বন্যার্তের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৫০০পিস। এ ছাড়া খাবার স্যালাইন মেলেনি এক প্যাকেটও। তিনি জানান, এই বরাদ্দ তার ইউনিয়নের চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য।
টাঙ্গাইল জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারী আ. রৌফ বলেন, আমরা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিচ্ছি না। যেখানে সম্ভব আমরা বিশেষ পদ্বতিতে কয়েক হাজার লিটার পানি একবারে বিশুদ্ধ করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, গাবসারা ইউনিয়ন ও কালিহাতী উপজেলার চরাঞ্চলে কয়েক হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধকরণ করা হয়েছে। তবে আমাদের কাছে সাপে কাটা রোগির কোন ভ্যাকসিন নেই। ঢাকা থেকে আমাদের মেডিকেল টিম আসবে। তখন টাঙ্গাইল রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান জানান, টাঙ্গাইলে সাপে কাটা রোগির জন্য ভ্যাকসিন নেই। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে একজনকে সাপে কেটেছিল। তিনি বেঁচে আছেন। তবে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুদ আছে। বন্যা কবলিত উপজেলা প্রতি ৫০হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ২০ হাজার খাবার স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যা দুর্গতদের কোন ধরণের স্বাস্থ সমস্যা হবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, সরকারি হিসেবে জেলার ৯টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪০০টি গ্রামের চার লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও মির্জাপুর। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে প্রায় এক হাজার ৩৩০টি পরিবারের মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বন্যায় ২১ হাজার ৯৭৪টি পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক বিলীন হয়েছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.