|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ডিজিটাল আইন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর ফলে অনলাইনে উষ্কানি ও সহিংস প্রচারণা থেকে নাগরিকরা নিরাপদ থাকবেন। মার্কিন দৈনিক পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন টাইমস-এ প্রকাশিত এক কলামে তিনি এসব কথা লিখেছেন। ১ জুলাই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে।
জয় লিখেছেন, দ্রুতগতিতে ডিজিটাল যুগের দিকে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। নাগরিকদের তথ্য ও গোপনীয়তার সুরক্ষায় গত বছর সংসদে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে একটি আইনও পাস হয়। এর ফলে অনলাইনে উষ্কানি ও সহিংসতামূলক প্রকাশনা থেকে নিরাপদ থাকবেন তারা। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন আইন বিদ্যমান।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও এনজিও এই গুরুত্বপূর্ণ আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
তবে এটা সত্যি নয়। বাংলাদেশে অনেক মুক্ত গণমাধ্যম চর্চা হচ্ছে। এখানে ৯টি জাতীয় দৈনিক রয়েছে এবং তিন শতাধিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক সংবাদে সরকারের সমালোচনাও করা হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম হয়তো সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংবাদ পরিবেশন করে, কিন্তু প্রায় ৩০টির মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে যারা ঘটনা যা ঘটে সেটাই সংবাদ হিসেবে তুলে ধরে। নিয়মিত সরকার, রাজনীতিবিদ ও তাদের নীতির সমালোচনা করে। একই ঘটনা আপনি ২২০টিরও বেশি স্বাধীন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পারবেন।
সরকার এই সংবাদমাধ্যমগুলোকে দমন না করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যেনও সংখ্যালঘুরা কথা বলতে পারে। সরকার সব ধরনের সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নাগরিকের সুরক্ষার জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল মিডিয়া যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, তাই এই আইনও দিনে দিনে পরিশোধিত হবে। অন্যান্য সব আইনের মতোই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও নিখুঁত নয়।
স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে; গণতন্ত্র অনেক জটিল। আর বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দুটোই রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এই দুইটি বিষয় নিশ্চিত করে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। এই সমন্বয় সরল কিছু নয়, এর ভারসাম্য রক্ষাও সহজ নয়।
আইনের প্রয়োগ যেন সর্বোচ্চ নাগরিকবান্ধব হয় সেজন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে সেটা সহজ নয়। অনেক সংবাদমাধ্যম যেমন জানিয়েছে, এই আইনের আওতায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ, আদালত এখনও কাউকে এই আইনে দোষী সাব্যস্ত করেনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দফতরের খসড়া অনুযায়ী এই আইন নিয়ে সংসদে ও সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিক, আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। এমনকি এডিটর্স গিল্ড এই আইন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে, যা এর চূড়ান্ত রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ফলে আমরা বুঝতে পারি যেহেতু এখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে তাই এই আইন পরিবর্তন করা দরকার। কর্তৃপক্ষও তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারবে যে এটা কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
তবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পাল্টাবে না। সরকার অবশ্যই নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা দিবে। যে কোনও ধরনের সন্ত্রাস, ব্ল্যাকমেইল ও সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। এই আইনের একটি ধারায় ধর্মীয় উষ্কানিমূলক বক্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়েছ, যাতে করে মুসলমান ও সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ থাকে। অন্যান্য ধারাতেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা খেয়াল রাখা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লাখ মানুষের তথ্য সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য ১৫ টি দেশের মতো এই আইন মানবতাবিরোধী আইন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোকে নিষিদ্ধ বিবেচনা করে।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, এমন কিছুতে সতর্ক থাকা দরকার। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু। ভুল তথ্য বা সংবাদ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যেমন, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে দেখা যায় মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরিফে এক হিন্দু দেবতার মূর্তির ছবি। এর প্রতিবাদে উগ্রবাদী মুসলিমরা নাসিরনগরে হিন্দুদের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর করে। ছবিটি যে ফটোশপ করা ছিল সেদিকে কেউ খেয়ালই করেনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন আচরণকে অনুৎসাহিত করে। সমালোচকদের দাবি, এই আইনের পরিধি অনেক বড় এবং এতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রে অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। তবে সংবাদমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাদেরও সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
সংবাদকর্মীরা যখন আইন ভঙ্গ করেন তখন শুধু পেশাগত কারণে নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে পারেন না। যদি সংবাদমাধ্যম জেনেশুনে ভুল সংবাদ পরিবেশন করে তবে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে। এটা কি নিখুঁত? অবশ্যই না, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন আসবে। নিখুঁত হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ ডিজিটাল আইন ও নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।