|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
টাঙ্গাইলে হত্যা ডাকাতি চাঁদাবাজি অপহরণে পুলিশ সদস্য-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৩০ জুন, ২০১৯
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-
অপরাধ দমন করাই পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ। অথচ টাঙ্গাইলে পুলিশের কিছু সদস্য সেই অপরাধের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ছেন। কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধের সঙ্গেও তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে বলে মনে করছে সচেতন মহল। জবাবদিহি নিশ্চিত না করা, পুলিশে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অস্বচ্ছতা এ জন্য দায়ী বলে মনে করে তারা।
জানা যায়, গত ছয় মাসে টাঙ্গাইলে অন্তত ১৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ ওঠার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে যুবক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২০ জুন পুলিশের এক কনস্টেবলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার কনস্টেবল হলেন টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসের মোশাররফ হোসেন হৃদয়। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের চেতরা গ্রামে।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, গত ১৪ জুন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামের সজিব মিয়া বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন। দুই দিন পর গত ১৬ জুন বিকেলে কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া উত্তরপাড়া বাজারের কাছে রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে মাথা থেঁতলানো ও গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন হৃদয়। এ ঘটনায় গত ২১ জুন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবান্দবন্দিও দেন তিনি।
গত ২০ জুন পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঘুষ লেনদেনের সময় দুজনকে আটক করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকরা হলেন জামালপুর সদর কোর্টের এসআই মোহাম্মদ আলী ও তাঁর সোর্স সুমি। এ ঘটনায় এসআই মোহাম্মদ আলীকে আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের গেড়ামারা গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আলমাছ মিয়ার বাড়িতে ডাকাতিচেষ্টার অভিযোগে ধাওয়া করে মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক সোহেল কদ্দুছসহ পাঁচজনকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাদের পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এসআই সোহেলকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সাদা পোশাকে থাকা মির্জাপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুশরাফিকুর রহমান ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার বরইবাড়ী গ্রামের রায়হান সরকার, লাবিব সরকার ও ডাকুরাই গ্রামের মাফিনের কাছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল থাকার কথা বলে আটক করেন। এরপর তাঁদের তাদের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশ তাঁদের আটক করে মির্জাপুর থানায় নিয়ে যায়।
গত ২৭ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল মডেল থানার এসআই জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রক্ষিতবেলতা গ্রামের লোকজন থানা ঘেরাও করে। এ সময় জেসমিন আক্তার ও তাঁর সোর্স বক্কর হোসেনের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। পরের দিন সকালে জেসমিন আক্তারকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার অভিযোগে গত ২৪ মে থানার আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালপুর থানার এসআই আবু তাহের ও এএসআই আশরাফুল আলম। বাকি ছয়জন কনস্টেবল।
এদিকে গত বছরের ১৩ আগস্ট পুলিশের এএসআই ফিরোজ আল মামুন তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী শিল্পীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। মির্জাপুর পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামুন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
পুলিশের অপরাধে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স (সিপিএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, পুলিশের অনেক সদস্যের মধ্যে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। তাই তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমাতে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাঁদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করা হচ্ছে। এর পরও কারো বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.